বরগুনায় মাদ্রাসা পড়ুয়া  বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় মিঠু (২১) নামের এক যুবককে কুপিয়ে যখম করেছে দুর্বৃত্তরা। বরগুনা পৌরশহরের লাকুরতলা মাছবাজার ব্রিজে সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর যখম মিঠুকে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মিঠুর বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, হিরু এলাকার একজন মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটে। কয়েকবছর ধরে সে আমার মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। হিরুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেই। দাখিল পরীক্ষার কারণে সমপ্রতি আবার মেয়েকে মাদ্রাসায় পাঠাই। যাওয়া-আসার পথে হিরু মেয়েটিকে আবারও উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। শুক্রবার আমার ছেলে মিঠু হিরুকে ডেকে বোনকে উত্ত্যক্ত না করার অনুরোধ জানায়। এরপর সোমবার বিকালে হিরুর ভাইয়ের ছেলে শুভ ফোন করে মিঠুকে লাকুরতলা মাছবাজার ব্রিজে যেতে বলে। বিকাল ৫টার দিকে মিঠু মাছবাজার ব্রিজে গেলে হিরু ধারালো রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যখম করে মিঠুকে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়।
অভিযুক্ত হিরু দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসলেও ভয়ে কেউ কিছুই বলে না। তার বিরুদ্ধে একাধিক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা ও বখাটেপনার অভিযোগ রয়েছে। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় তাকে পুলিশ বা কেউ কিছুই বলে না। ফলে সে ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
হিরু লাকুরতলা এলাকার মোকসেদ চৌকিদারের ছেলে। সে এলাকার চিহ্নিত বখাটে। এছাড়া তার ভাইয়ের ছেলে শুভ খান একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে ২০০৯ সালে লাকুরতলা এলাকায় একটি মারামারির ঘটনায় তার নামে মামলা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বখাটেপনা ও মারামারির ঘটনায় যুক্ত ছিল সে। তবে প্রতিটি ঘটনা প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার কয়েকজন জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লাকুরতলা এলাকায় একটি গ্যাং গড়ে উঠেছে। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের পদস্থ একজন নেতার ছত্রছায়ায় চক্রটি নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসা, জমি জবরদখল, বখাটেপনা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, চাঁদাবাজীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে চক্রটি জড়িত।
বরগুনার নাট্য প্রশিক্ষক আসাদ জানান, শনিবার বিকালে নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে পূজার নাচের অনুষ্ঠানের জন্য যাচ্ছিলেন তিনি। পথে ওই চক্রটি মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। এর প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করে বখাটেরা। এ ঘটনায় তিনি বরগুনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাকিল আহমেদ জানান, মিঠুর মাথায়, হাতে, পায়ে ও উরুসহ অন্তত আটটি স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।
বরগুনা থানার ওসি মোহাম্মদ আবির হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মিঠুর বাবা এখন ছেলের সঙ্গে বরিশাল মেডিকেলে আছেন। তিনি ফিরে এসে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তার আগেই বখাটেদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।