ইসমাইল হোসেন চৌধুরী। সম্রাট তার খেতাব। শুধু নামে নয়, চালচলনও সম্রাটের মতোই তার। চাঁদাবাজি, টেণ্ডারবাজি, ক্যাসিনো কাণ্ড, কোথায় পদচারণা নেই তার। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। নেতা-কর্মী-সমর্থকে বেষ্টিত থাকেন সব সময়। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার একচ্ছত্র দাপট। এ লাইনে গুরু তিনিই। রয়েছে একাধিক শিষ্য।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় সম্রাটের রাজনৈতিক জীবন শুরু। সেটা ১৯৯০ সাল। সেই সময় তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের রমনা অঞ্চলে সংগঠকের দায়িত্বে ছিলেন। এ কারণে তখন নির্যাতনসহ জেলও খাটতে হয় তাকে। এরপর থেকেই ‘সম্রাট’ খ্যাতি পান।

ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের পৈত্রিক নিবাস ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামে। তার পিতার নাম ফায়েজ উদ্দীন চৌধুরী। দুই ভাই ও দুই  বোনের মধ্যে সবার বড় সম্রাট।

১৯৯১ সালে ছাত্রলীগে থাকা অবস্থায় এরশাদের পতনের পর ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। সে আমলে সম্রাটের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ১/১১-এর রাজনৈতিক  প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় সম্রাট যুবলীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন।

সম্রাটের চাঁদাবাজির হাতেখড়ি ২০০১ সালে। সংগঠন চালানোর নামেই চাঁদাবাজিতে নামে তিনি। এ সময় বিভিন্ন অফিসে, বিভিন্ন লোকের সঙ্গে  যোগাযোগ শশুরু করেন। ব্যবসায়ীক মহলের যোগাযোগ গড়ে ওঠে তার।

২০০৬ সালের পর যখন ওয়ান ইলেভেন আসে সেই সময় সম্রাট আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। এ সময় দল পরিচালনা করা, যুবলীগের ঢাকা মহানগরীকে ঠিক রাখার মূল কাণ্ডারি ছিলেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাতারাতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বড় ফ্যাক্টরে পরিণত হন। বিশেষ করে মতিঝিল পাড়ায় তার একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়। দ্রুতই মতিঝিল পাড়া তার দখলে চলে যায়।

এই সময়েই তার সঙ্গে সিঙ্গাপুরের কানেকশন হয়। সিঙ্গাপুরে যে ক্যাসিনো বাণিজ্য এবং নানারকম ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। একদিকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কাঁচা টাকা অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের হাতছানি দুইয়ে দুই মিলিয়ে সম্রাট নগরীতে আত্মপ্রকাশ করে।

এরপর সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। সম্রাট সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে অর্থ উপার্জনের দিকেই বেশি মনোনিবেশ করেন।

সম্প্রতি ক্যাসিনো চালানো, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ সব অভিযোগের তীর এখন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের দিকে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি রাজধানীর মতিঝিলসহ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার সরকারি দপ্তর, ক্লাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড তার নিয়ন্ত্রণে।

উল্লেখ্য, ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন দক্ষিণ যুবলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। চার মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ব্যবসায় খালেদের ‘গুরু’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে সম্রাটের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে সম্রাটকে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে উল্লেখও করা হয়েছে। সম্রাটের ইশারায় ঢাকার বেশকয়েকটি ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চলে। সেখান থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করেন তার সহযোগীরা। এ কাজ চালিয়ে যেতে প্রভাবশালীদের টাকা দিতেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, সম্রাট একজন পেশাদার জুয়াড়ি এবং এ কারণে সিঙ্গাপুরে যাতায়াত আছে তার। মাসের এক-তৃতীয়াংশ সময় জুয়া খেলতে সিঙ্গাপুরে কাটান তিনি। সেখানের মারিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে সম্রাট একজন বিশিষ্ট জুয়াড়ি বলে জানা গেছে। সিঙ্গাপুরে গেলে বিমানবন্দর থেকে তাকে বিলাসবহুল লিমুজিন গাড়িতে করে ওই ক্যাসিনোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সিঙ্গাপুর সফরের সময় আরমানুল হক ও মোমিনুল হক মোমিনসহ যুবলীগের একাধিক নেতা সম্রাটকে সঙ্গ দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।