বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে অপকর্মকারী ১০০০ জনের তালিকা দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। এ তালিকা ধরে সাংগঠনিক অ্যাকশনে যাবে দলটি। পরে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে। প্রথম পর্যায়ে যেসব অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে রয়েছেন তাদের বহিস্কার করা হবে। তালিকায় থাকা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা চিরতরে বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ কয়েক নেতা। পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদের দলে ভেড়াতে যেসব নেতারা মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে তাদের সতর্ক করে দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, একাধিক সোর্সের মাধ্যমে দলে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন হাজার খানেক নামের রয়েছে।

তাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া হবে জানিয়েছেন আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দল থেকে যারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তাদের নিয়ে অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিড-এই শব্দগুলো দলটিতে বেশ আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল থেকে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে এসব অনুপ্রবেশকারীরা ভিড়েছেন বলে জানান একাধিক নেতা। এদিকে বুধবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন। সেখানে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। তাদের বিষয়ে কঠোর মনোভাব জানান প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন-তাদের কারণে আমার দলের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছে, অনেকেই অভিমান করে দূরে সরে যাচ্ছে। যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের আমলনামাও আমার হাতে আছে। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা এসব অনুপ্রবেশকারীই দলের বদনাম করছে। তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, দলীয় শক্তি ও জনসমর্থন থাকলে আর কিছু লাগে না। যারা অপরাধী, দুর্নীতিবাজ তারা রক্ষা পাবে না। আওয়ামী লীগ চালাতে গুন্ডাপান্ডা লাগে না। আমার দলকে আগাছা মুক্ত করতে হবে।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ধরে ধরে বের করে দেয়া হবে। যারা অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না। দলে যেন অনুপ্রবেশকারীরা না ঢুকতে পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীরা মূলত দুটো উদ্দেশ্য সামনে রেখে আওয়ামী লীগের আশ্রয় নিচ্ছে। এই হাইব্রিডরা আওয়ামী লীগে ঢুকছে সুযোগ সুবিধাগুলো হাতিয়ে নিতে এবং আরেকটি পক্ষ আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিচ্ছে নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য। এদিকে আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতার সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে যোগদানকারীর সংখ্যা উদ্বেজনক হারে বাড়ছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু টানা সরকারে রয়েছে, সেজন্য সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে লোকজন ভিড় করছে তাদের দলে। এই নব্যদের অনেকের নানান অপরাধের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তারা আরও বলেন,অনেকে আওয়ামী লীগের বদনাম করার জন্য, অনেকে চেহারাটা পাল্টিয়ে নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে বিভিন্ন কাজ করে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলছে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে যাচ্ছে,তারা অনেক সময় হাইব্রিডদের কারণে অবহেলিত হয়। অনেক জায়গায় নব্যদের সঙ্গে পুরোনো নেতা কর্মীদের দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতির কারণে তৃণমুলে হতাশাও তৈরি করছে। রাজধানীর মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান,অনুপ্রবেশকারিরা এসে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং অনেক ক্ষতি করছে। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে দল করি,তারা প্রতি পদে পদে এটা অনুভব করছি। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে- সেগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জড়িত হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে অপরাধের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত আছে তারা শুধুই অপরাধী। তাদের অন্য কোনো পরিচয়ে রেহায় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মিদের অপরাধের আধিক্য বিবেচনায় নীতি-নির্ধারণী মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধ প্রবণতার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে দলটি এখন তৎপর।