অনলাইন ক্যাসিনো বাণিজ্যে দেশে অবস্থানরত একাধিক বিদেশি নাগরিক জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব-এর সাইবার ক্রাইম সেল বিভাগ। অনলাইনের যেসব সাইটে ক্যাসিনো খেলা হয় সেগুলোর মূল ডোমেন তারা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কোন বিদেশি নাগরিক তাদের সাইটের মূল ডোমেন ফিফটি ফিফটি শেয়ারে বাংলাদেশের ক্যাসিনো ডনদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক ব্যবসা করছে। ওই সাইট থেকে যা আয় হয় তার অর্ধেক তারা পেয়ে থাকেন। আর এক একটি গেটওয়েতে জমা হয় কোটি কোটি টাকা। ওই টাকা অবৈধভাবে বিদেশি নাগরিকরা দেশ থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছেন।

ইউরোপ, আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের একাধিক দেশের নাগরিকরা ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তারা ভ্রমণ বা বিজনেস ভিসায় বাংলাদেশে এসে অনলাইনের ক্যাসিনোর কার্যক্রম চালাচ্ছে।

যাদের অধিকাংশের মূল অফিস হচ্ছে বনানী ও গুলশান এলাকায়। কেউ কেউ আবার তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবসার আড়ালে অনলাইন ক্যাসিনো বানিজ্য চালাচ্ছেন। র‌্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ওই চক্রকে ধরতে মাঠ কাজ করছেন। ইতিমধ্যে এক ও একাধিক ব্যক্তির নাম পেয়েছে র‌্যাবের গোয়েন্দা সংস্থা। তারা কখন বাংলাদেশে এসেছেন এবং তাদের আসার উদ্দেশ্য কী-ছিল তা ইমিগ্রেশন থেকে র‌্যাবের গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। কারও বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঢাকাসহ সারা দেশে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান চলছে। খালেদ, লোকমানসহ একাধিক ক্যাসিনো সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যরাও নজরদারিতে আছেন। ওইসব ক্যাসিনো সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা পর র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিকার করেন যে, অনলাইনে মোটা অংকের ক্যাসিনো বানিজ্য হয়ে থাকে। কারা ওই অনলাইনে ক্যাসিনো বাণিজ্যে জড়িত তাদের ব্যাপারে প্রযুক্তির সাহাজ্যে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে র‌্যাবের সাইবার ক্রাইম শাখা।
সূত্র জানায়, তথ্য সংগ্রহের একপর্যায়ে তারা অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের নাম জানতে পারে। তাকে নজরদারি শুরু করে র‌্যাবের গোয়েন্দারা। তিনি থাই এয়ারওয়েজে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এক পর্যায়ের র‌্যাবের গোয়েন্দারা তাকে বিমান থেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা আরও জানায়, অনলাইন ক্যাসিনোতে কিভাবে সেলিম প্রধান যুক্ত হলেন এ ব্যাপারে তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি একপর্যায়ে স্বীকার করেন যে, থাইল্যান্ডে উত্তর কোরিও নাগরিক মিস্টার দো নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তি সেলিম প্রধানকে অনলাইন ক্যাসিনোর ব্যবসার তত্ত্ব প্রদান করেন। পি-২১ ও পি-২৪ নামে তারা একটি সাইট খোলেন। ওই সাইটের মূল ডোমেনের মালিক ছিলেন উত্তর কোরিত্ত নাগরিক মিস্টার দো। তিনি শুধু মাত্র ওই সাইটের মূল ডোমেনের মালিক হওয়ার কারণে পঞ্চাশ শতাংশ টাকা পেতেন।

তিনি স্বীকার করেন যে, ঢাকায় এমন অনেক বিদেশি নাগরিক এমন ব্যবসায় জড়িত। তারা এক একটি গেটওয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাক বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। তার এই তথ্য পেয়ে মাঠ পর্যায়ে আরও তথ্য সংগ্রহ শুরু করে র‌্যাবের গোয়েন্দারা। গুলশান ও বনানী এলাকায় যেসব স্থানে বিদেশিদের করপোরেট অফিস রয়েছে সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে অনলাইন ক্যাসিনো বানিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে একাধিক বিদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এজন্য স্থল ও আকাশ পথে ইমিগ্রেশন বিভাগে তাদের নাম দিয়েছেন আইন-শৃংখলা বাহিনী।

সূত্র জানায়, যাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের উল্লেখ যোগ্য ইউরোপের মাল্টার নাগরিক। যেদেশ ক্যাসিনোর জন্য বিখ্যাত। কিছু রয়েছে থাইল্যান্ড ও আফ্রিকার নাগরিক। কোন কোন বিদেশি নাগরিক এনজিওর কর্মকর্তার নাম করে বাংলাদেশে এসেছেন। আলিশান অফিস নিয়ে গড়ে তুলেন অনলাইন ক্যাসিনোর বিশাল সাম্রাজ্য। তাদের এজেন্ট হিসাবে বাংলাদেশে কাজ করেন শতাধিক অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট।