এখনো খোলা যায়নি সেই রহস্যময় পাঁচ সিন্দুক। এসব সিন্দুকে কী আছে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্লাবের সুরক্ষিত বড় সাইজের এই পাঁচটি সিন্দুক খোলাই হয়নি। সিন্দুকগুলো এতটাই সুরক্ষিত যে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা দূরের কথা, গ্যাসকাটার দিয়েও কাটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সিন্দুকগুলো খোলার চেষ্টা হচ্ছে নানাভাবে। রাজধানীতে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর একে একে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি দেশি গডফাদারদের যেমন রয়েছে সংশ্লিষ্টতা, তেমন শোবিজ অঙ্গনের তারকাদেরও ক্যাসিনোতে জড়ানোর খবর চাউর হয়েছে। ক্যাসিনোয় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দের পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের অর্থও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ক্যাসিনোর অভ্যন্তরে অনেক কিছুতেই এখনো হাত পড়েনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করা হয় ভিক্টোরিয়া, দিলকুশা, মোহামেডান ও আরামবাগ ক্লাব। এসব ক্লাব থেকে এবং র‌্যাবের অভিযানে সিলগালা করা ইয়ংমেনস ক্লাবসহ মোট পাঁচটি ক্লাবে দেখা গেছে বড় সাইজের সিন্দুক; যা এখনো খোলা যায়নি। এর একেকটির ওজন অন্তত ৪০০ কেজি। আগুন প্রতিরোধী সিন্দুকগুলো স্টিলের ঢালাইয়ে তৈরি। কেউ কেউ বলছেন, ক্যাসিনোর সিন্দুকে আছে জুয়া খেলার চিপস, অস্ত্র ও টাকা। তবে সিন্দুকগুলো খোলা হলেই রহস্যের জট খুলবে। মতিঝিলের ক্লাবপাড়া থেকে আরও ৩২টি ছোট ছোট সিন্দুক হাওয়া হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের আঁধারে এসব সিন্দুক অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। উধাও হয়ে যাওয়া সিন্দুকগুলোর সন্ধানে তৎপরতা শুরু করেছে র‌্যাব। পুলিশ জানায়, উন্নত প্রযুক্তির সিন্দুকগুলো ডিজিটাল পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা। এগুলো এতটাই সুরক্ষিত যে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা দূরের কথা, গ্যাসকাটার দিয়েও কাটা সম্ভব নয়। তাই সিন্দুকের দরজা খুলতে ক্যাসিনোর মালিকদের খোঁজা হচ্ছে। ক্যাসিনোয় পুলিশের অভিযান চালানোর পর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। জিডির তদন্ত করছেন মতিঝিল থানার এসআই ফারুক হোসেন। তদন্তে ইতিমধ্যে চারটি ক্লাব থেকে সিসি ক্যামেরার ডিভিআর জব্দ করা হয়েছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে, অনুমতি পেলেই সেগুলো সিআইডিতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন এসআই ফারুক হোসেন। মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, মামলা না হলেও জিডির ভিত্তিতে একটি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই তালিকা আদালতেও পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সিন্দুক ভাঙার জন্য আদালতের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘ক্লাবগুলো সিলগালা করে রাখা হয়েছে। আর ওই সিন্দুক নিয়ে এক ধরনের রহস্য আছে। তবে সেটি ভাঙার প্রক্রিয়ায় আমরা ধীরে ধীরে যাব।’ জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে চলছে সারা দেশে টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। গত ১০ দিনে মোট ৩২টি অভিযান (র‌্যাব ১৮ ও পুলিশ ১৪) পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরী যুবলীগের দুই নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেনসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এসব অভিযানে নগদ ১৭ কোটি টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ২০১ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে।