গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্মাণ কাজে ২৬% ভাগাভাগি হয়। ভবন রক্ষণাবেক্ষণ কাজে এ ভাগাভাগির হার আরো বেশি। এত ভাগাভাগির পরও ঠিকাদাররা লাভের মুখ দেখেন। চার ভাগের এক ভাগ খরচের পর কীভাবে ঠিকাদার লাভের মুখ দেখেন এনিয়ে নানা প্রশ্ন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নন-টেন্ডার আইটেমে উচ্চমূল্য এবং ভেরিয়েশনের কারণে ঠিকাদাররা পুষিয়ে নেন । এজন্য টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেন তারা। ভবনের বিপরীতে ভেরিয়েশন অর্ডারের বেশিরভাগ অর্থ প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। জিকে শামীম ইস্যুতে টেন্ডারের এ ভাগাভাগির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইস্টিমেট (প্রাক্কলন) তৈরি, দরপত্র (টেন্ডার) ডাকা, কার্যাদেশ প্রদানসহ সব কাজে অর্থ খরচ করতে হয়। দরপত্র ডাকার পর ঠিকাদার হয়ে কাজ পেতে অর্থ খরচ করতে হয়। শুরুতে প্রাক্কলিত মূল্যের ১০% নেগোসিয়েশন মানি হিসেবে দিতে হয়। এরপর দরপত্র প্রক্রিয়ার সময় প্রধান প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের কাছে ৭% তুলে দিতে হয়। এ অর্থ বিভিন্নভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাছে ভাগাভাগি হয়। নেগোসিয়েশন মানি ও কর্মকর্তাদের টাকা

দেয়ার পরই ওয়ার্ক অর্ডারের মুখ দেখতে পান ঠিকাদাররা। এক ঠিকাদার মানবজমিনকে বলেন, নেগোসিয়েশনের অর্থ দেয়ার পরই যারা টেন্ডার কন্ট্রোল করেন ওই সব মাসলম্যানদের ৬% বুঝিয়ে দিতে হয়। নেগোসিয়েশন মানির একটি বড় অংশ মাসলম্যানরাই পেয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন নামে দরপত্র কিনে নেগোসিয়েশন মানির একটি বিরাট অংশ তারাই দখল করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে জিকে শামীম বেশ কিছু সুবিধা পেয়েছেন। বিভিন্ন কৌশলে তাকে এসব সুবিধা পাইয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকৌশলীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, টেন্ডার পাওয়ার পর ১০-১৫% কাজ করে মাসের পর মাস ফেলে রাখতেন শামীম। এরপর নানা অজুহাতে কয়েক দফা টেন্ডার মূল্য বাড়িয়ে নেয়া হতো। জিকে শামীম এভাবে শত শত কোটি টাকার ভেরিয়েশন বা টেন্ডার মূল্য বাড়ানোর কাজ করেছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা। এসব ভেরিয়েশন থেকে ক্ষমতায় থাকা আড়ালের ব্যক্তিদের দুই হাতে সুবিধা দিয়েছেন। এক ঠিকাদার জানান, আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ববোর্ড ভবন নির্মাণে ভেরিয়েশনের নামে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। মাত্র ৮০ কোটি টাকার এই ভবন নির্মাণের ব্যয় কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩৫০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বাড়তি এই টাকার বড় অংশ ঠিকাদারদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেন্ডারের বড় দুর্নীতির নেপথ্যে অফিস প্রধান, মন্ত্রণালয় বা বিভাগের পরিকল্পনা শাখা এবং পরিকল্পনা কমিশন জড়িত রয়েছে। মূলত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অর্থ ছাড়, অর্থ বরাদ্দসহ সব কাজ করে থাকেন। তারাই ঠিকাদারদের সঙ্গে থেকে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন। গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কাজ শেষ বা চলমান থাকা অবস্থায় ঠিকাদাররা বিল উত্তোলন করতে গেলে ৩% খরচ করতে হয়। এর কম খরচ করলে বিল পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বলা হয়, বরাদ্দকৃত অর্থ এখনও আসেনি। পরে দেখা করেনসহ নানা কথা।